সেইন্ট প্যাট্রিক্স ডে এবং থ্রি মাস্কেটিয়ার্স

(পাশে সেইন্ট প্যাট্রিক্স ডে ২০০৯-এর প্যারেডের ছবি)

ডাবলিনে যখন ২০০৭ সনে প্রথম আসি তখন নিতান্তই গোবেচারা ধরনের মানুষ আমি। পরিচিত বলতে সৈকত ভাই এবং ওনার স্ত্রী নদী। মাঝে মাঝে দেখা হলেও নিয়মিত দেখা বা কথা হতো না ওনাদের সাথেও। দূর্বোধ্য আইরিশ উচ্চারন আর জাঙ্কিদের অত্যাচারে রীতিমত কেঁচো হয়ে থাকতাম তখন। তারপর ধীরেধীরে অত্মবিশ্বাস বাড়তে শুরু করলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবগুলোতে যেতে শুরু করলাম। পরপর দুবছর ট্রিনিটির পোস্ট গ্রাজুয়েট রিসার্চ জার্নালের সম্পাদকীয় প্যানেলের সদস্য হলাম। ওদের উচ্চারনটাও খানিকটা রপ্ত করলাম। ইউটিউব এবং অন্যান্য ওয়েব সাইটের সাহায্যে রাগবী খেলার নিয়ম-কানুন শিখলাম এবং আইরিশদের সাথে গলা ফাটিয়ে আমিও নিয়মিত আয়ারল্যান্ডের খেলা দেখতে শুরু করলাম। তবে তখনও একটা অপূর্নতা আমাকে পোড়াতো। বাংলা বলা হতো না। চার পাশে কেবল আইরিশ আর আইরিশ। Continue reading “সেইন্ট প্যাট্রিক্স ডে এবং থ্রি মাস্কেটিয়ার্স”

সেইন্ট প্যাট্রিক্স ডে এবং থ্রি মাস্কেটিয়ার্স

ডাবলিনের ডায়েরী – নয় (১৬ অগাস্ট ২০০৮)

গত দুদিন রীতিমত হুটহাট করে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেলো। অনেকটা মিরাকলের মতই মনে হচ্ছে, যেন হঠাৎ শুন্য থেকে হাতের মুঠোয় একটা বেড়ানোর সুবর্ন-সুযোগ চলে এসেছে। ভণিতা না করে খুলেই বলছি। পরশু বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে মেইল চেক করে দেখি আমাদের ইন্টারনাল চেইনে একটা ওয়ার্কশপ কাম সামার স্কুলের ইনভাইটেশন এসেছে, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের অলস্টার বিশ্ববিদ্যালয় (ডেরী ক্যাম্পাস) থেকে। প্রথমে খুব একটা গুরুত্ব দেইনি; এরকম বহু আমন্ত্রন প্রতিদিনই আসে। অতএব এটাকে বিশেষ ভাবে দেখার তেমন কোন কারন নেই। কিন্তু মেইলটা দৃষ্টি আকর্ষন করতে বাধ্য হলো সাবজেক্টের কারনে। সেখানে লেখা আছে খুব অল্প কিছু ছাত্রদের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফিস মউকুফ করা হবে। আসন যেহেতু সীমিত, যারা আগে আবেদন করবে তারাই সুযোগ পাবে। দ্রুত যোগাযোগের ঠিকানায় চোখ বুলিয়ে নিলাম এবং প্রথম ধাক্কাটা তখনই খেলাম। জনৈক ড. এন এইচ সিদ্দিকী’র সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এই নামটা আমার খুব পরিচিত লাগলো। মনে করার চেষ্টা করলাম নামটা আমি কোথায় দেখেছি। পুরোপুরি মনে না পড়লেও অনুমান করতে সক্ষম হলাম। আমি যখন রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড (এই পোস্টে পরবর্তিতে এই নামটাকে সংক্ষেপে রিপাবলিক লেখা হবে) আসি তখন নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড থেকে একজন স্যার আমাকে মেইল করে কনগ্রাচুলেট করেছিলেন। বলাইবাহুল্য তিনি বাংলাদেশী। আমিও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পাল্টা মেইল করেছিলাম। তবে এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল তিনিই ড. এন এইচ সিদ্দিকী। জিমেইলের আর্কাইভ মেইলে সার্চ দেয়ার সাথে সাথে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে গেলো; আমার অনুমান শতভাগ সঠিক। চিন্তাটা তখনই মাথায় আসলো। একবার নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড থেকে ঘুরে আসলে কেমন হয়? রিপাবলিকের আইরিশদেরতো গত নয় মাস দেখলাম, এবার একটু পাশের দেশের আইরিশদের দেখে আসলে মন্দ হয় না। Continue reading “ডাবলিনের ডায়েরী – নয় (১৬ অগাস্ট ২০০৮)”

ডাবলিনের ডায়েরী – নয় (১৬ অগাস্ট ২০০৮)

ইফ ইউ ডোন্ট গেট ইট, ইউ ওন্ট গেট ইট!!!

আয়ারল্যান্ডে যখন প্রথম আসি, তখন থাকতাম ক্লনটার্ফের সমুদ্র সৈকতের পাশে। অনিদ্য সুন্দর সমুদ্রের দৃশ্য দেখে যেন ঘুম ভাঙতো, আবার ঘুমাতে যেতাম। যাই হোক, এই ব্লগের মূল প্রসঙ্গ আয়ারল্যান্ডের প্রকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং কিছু অসুন্দর কথা!

আমার সেই ক্লনটার্ফের বাসায় যেতে পথে দুবার ডার্ট (আয়ারল্যান্ডের স্কাই ট্রেন) ক্রসিং ছিল। যেহেতু স্কাই ট্রেন, ওভার ব্রিজের মত করে গাড়ির রাস্তার উপর দিয়ে চলে যেত। ফলে বিজ্ঞাপন দেয়ার একটা চমৎকার ক্ষেত্র সৃস্টি হতো। ভোডা ফোন বা ও-টু মোবাইল কোম্পানীই প্রায় এধরনের বিজ্ঞাপনের স্থানগুলো পাল্লা দিয়ে দখল করে রাখে। তবে ব্যতিক্রম যে হয় না, তা নয়। যেমন ইভনিং হ্যারাল্ড (এখানকার একটা দৈনিক)-এর একটা বিজ্ঞাপন। তাতে লেখা, Evening Herald – If you don’t get it, you wont get it! Continue reading “ইফ ইউ ডোন্ট গেট ইট, ইউ ওন্ট গেট ইট!!!”

ইফ ইউ ডোন্ট গেট ইট, ইউ ওন্ট গেট ইট!!!

ডাবলিনের ডায়েরী – দুই (৬ এপ্রিল ২০০৮)

মেজাজ খুব খারাপ। আমি একবার ওভারকোট খুলছি আবার পড়ছি। বাসায় আছি বলে রক্ষা, বাহিরে গেলে যন্ত্রনাটা পীড়ার পর্যায়ে অনুভুত হয়। রহস্য না করে খুলে বলছি। পরশুদিন ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরম। আমি টি-শার্ট এর উপর শার্ট তার উপর সোয়েটার এবং তার উপর ওভারকোট পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। ফলাফল অতি জঘন্য। এক সময় আমি অনুভব করলাম রিতিমত আমার শরীরে পিপড়ার মত কিছু দৌড়াচ্ছে! আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না আমার সামনের টেবিলে বসা জেনি বেচারী কেন তার উর্ধাঙ্গের প্রায় সব কাপড় খুলে ফেলেছে। আমিও শুরু করলাম। প্রথমে জুতা, তার পর মুজা তার পর একে একে ওভারকোট, সোয়েটোর এবং শার্টের সব বোতাম। তবুও গরম লাগছে। কি বিপদ! শেষ পর্যন্ত তিনটার সময় বাসায় চলে আসলাম। বাসে উঠে দেখি আমার সামনে একটা ছেলে বসেছে। সে পারলে বাসের জানালা ভেঙ্গে ফেলে, এত গরম। একটা বেশ নাদুশ-নুদুশ মেয়ে উঠেছিল। তার মুখে লাল লাল ছোপ পড়ে গিয়েছিল ডাবলিনের অসহনীয় গরমে। Continue reading “ডাবলিনের ডায়েরী – দুই (৬ এপ্রিল ২০০৮)”

ডাবলিনের ডায়েরী – দুই (৬ এপ্রিল ২০০৮)

একটি আইরিশ মিছিল এবং আমার ভাবনা

দিনটি ছিল সম্ভবত গত ইস্টারের রবিবার। ছুটির দম বন্ধ করা আবহাওয়া থেকে একটু মুক্তি পেতে নগরকেন্দ্র তথা সিটি সেন্টারে গিয়েছিলাম ঘুরতে। বলে রাখা ভালো, আমার বিশ্ববিদ্যালয় একদম নগরকেন্দ্রের মাঝে অবস্থিত। অতএব এখানে আমি নয়টা – পাঁচটা এমনিতেই থাকি। তবুও সেদিনটি ব্যতিক্রম অথবা বিশেষ হবার কারন ছিল একটানা এক ঘেয়ে ছুটি যা আমি বাসায় বসে বসে পার করছিলাম। যাইহোক, নগরকেন্দ্রে কোন সুনির্দিষ্ট কাজ না থাকায় আমি এলোমেলো হাটছিলাম। ডাবলিনে আসার পর এটা আমার এক নুতন বাতিক হয়েছে। কোন কাজ ছাড়াই আমি অচেনা পথে মাইলের পর মাইল হেটে বেড়াই। সেদিনও শুরু করলাম মাত্র, কিন্তু ও’কনেল স্ট্রিট এসে আমাকে থমকে দাড়াতে হলো। Continue reading “একটি আইরিশ মিছিল এবং আমার ভাবনা”

একটি আইরিশ মিছিল এবং আমার ভাবনা