অচলায়তন – ২

আচলায়তন হলো আমার হতাশার গদ্য। অর্থহীন প্রলাপ, উদ্দেশ্যহীন ভাবনা আর অপ্রাপ্তির ইন্দ্রজালে ঘেরা আমার বোধহীন অনুভুতি। অনেক আগে লিখেছিলাম অচলায়তনের প্রথম পর্ব। তারপর কি জীবন পাল্টে গেলো? সব হতাশা মুছে গিয়ে সোনালী সময় এলো? নাহ! জীবন এখনও আগের মতই বয়ে চলেছে। লিফি নদীর পানির স্তর উঠে নামে তবে জীবনের পরিবর্তন হয় না। জেমস জয়েস থেকে বার্নাড শ অথবা জোনাথন সুইফট-ব্র্যাম স্টোকার থেকে অস্কার ওয়াইল্ড; সবার চরণস্পর্শী এই ডাবলিনের মাটি আমার জন্য নিতান্তই মাটি, যেন সুনীলের লেখা “বরুনার বুকে আজ কেবল মাংসেরই গন্ধ”।

মাস্টার্স প্রায় শেষের দিকে। থিসিস লেখা এগিয়ে চলেছে। অক্টোবরে ৩১ তারিখ সাবমিশন। এরপর আর ‘চলমান ছাত্র’ শব্দটা ব্যবহার করতে পারবো না। পাশ করলে গর্ব ভরে লিখতে পারবো আমি ট্রিনিটির ডিগ্রীধারী, ফেইল করলে মুখ লুকানোর জায়গা থাকবে না। মাঝেমাঝে অবাক লাগে। দেখতে দেখতে দুটো বছর চলে যাচ্ছে। এইতো সেদিন এলাম ডাবলিন! Continue reading “অচলায়তন – ২”

অচলায়তন – ২

অচলায়তন – ১

রাত ১২টা বাজে। একটু আগে ডিনার করে আসলাম। এখন এক মনে বসে সবাইকে নিয়ে ভাবছি। নিজেকে নিয়ে, চারপাশের মানুষদের নিয়ে, এমন কি যাদের নিয়ে ভাবার কারন নেই তাদের নিয়েও। চারদিকের পরিবেশে কেমন যেন একটা নিরবতা। আপাত সাধারন এই নিরবতার মাঝে একটা অন্যরকম শব্দ আছে। খুব সাবধানে কান পাতলে শোনা যায়। দূর দিয়ে চলে যাওয়া দু-একটা গাড়ির শব্দ। বাসার সামনের রাস্তাটা দিয়ে মাতাল হয়ে থাকা বান্ধবীবে সামলে নিয়ে এগিয়ে চলা ছেলেটার ভালোবাসার যন্ত্রনা। পাশের রুমের মেয়েটার নুতন বয় ফ্রেন্ড হয়েছে। গতদুই দিন ছেলেটা আমাদের বাসায় রাতে থাকে। মধ্য রাতে ওদের অস্পষ্ট হাসিও বেশ লাগে শুনতে। খুব ছিমছাম একটা জগৎ। চারদিকে ভালোবাসার বিনিময় হচ্ছে। যে যে যার যার মত জীবন নিয়ে ব্যস্ত। আর আমি নিরব রাতে সেই জীবনকে কাঁটাছেড়া করছি।

ইদানিং একটা প্রশ্ন আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। বলা যায় রীতিমত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এই যে পড়ালেখা করছি, এর পর কি হবে? জীবনের লক্ষ্যটাই বা কি হওয়া উচিত। অনেকে বড় চাকরী পেতে চায়, অনেক টাকা আয় করতে চায়। অনেকে পারেও। কিন্তু প্রশ্নটা তবুও থেকেই যায়। তার পর? কিছু মানুষ আছে যারা জীবনটাকে হেয়ালীর মত করে কাটিয়ে দিচ্ছে। যা খুশি করছে, রাস্তায় মদ্যপ হয়ে পড়ে থাকছে। দেখে খুব খারাপ লাগে। এই কি তবে জীবনের সার্থকতা? আবার কিছু মানুষ আছে যারা ঈশ্বরের পথে জীবনকে উৎসর্গ করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, এটাও কি জীবনের সার্থকতা হতে পারে? একজন বিজ্ঞানী তার আবিষ্কার দিয়ে সভ্যতাকে অনেক এগিয়ে নিচ্ছে, অর্থনীতির নুতন নুতন তত্ত্ব বিশ্বের উন্নয়নকে তরান্বীত করছে। কিন্তু সেই আবিষ্কার হিরোশিমায় সভ্যতাও ধ্বংস করেছে, সেই অর্থনীতির তত্ত্বগুলো বর্তমান বিশ্বে ক্রেডিটক্রান্চের কারনও হয়েছে। তাহলে সার্থকতা কোথায় রইলো? এই চিন্তাগুলো আমাকে অনুপ্রানিত করে না বরং হতাশ করে। Continue reading “অচলায়তন – ১”

অচলায়তন – ১