ডাবলিনের ডায়েরী – আট (২ অগাস্ট ২০০৮)

আমি কোন দিনও কল্পনা করিনি পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমি ঘুমাতে যাবো, আবার পাহাড়ের কোল ঘেসে জেগে ওঠা সূর্য সকালে তুলে দেবে আমায় ঘুম থেকে। সবই মাঝে মাঝে স্বপ্নের মত মনে হয়। কোথা থেকে যেন কি হয়ে গেলো….। তাকিয়ে আছি মুগ্ধ চোখে পাহাড়ের দিকে। আমার জানালার পর্দা সরানো, আর তা দিয়ে দেখা যাচ্ছে উত্তর ডাবলিনের পাহাড়। রাত সাড়ে নয়টায়ও আজ বেশ আলো রয়েছে। যদিও গ্রীষ্মের সময়টায় সাড়ে দশটার আগে অন্ধকার নামে না। একটু একটু শীত পড়তে শুরু করেছে। কিভাবে দেখতে দেখতে প্রায় নয় মাস চলে গেলো। এখনো মনে হয়, এইতো সেদিন এলাম এখানে!

আজ বেশ কিছু কাজ করেছি। রুমটা ভয়াবহ নোংরা ছিল। সেটা পরিষ্কার করলাম। কিচেনটা পরিষ্কার করে গ্রিন বিন এবং ব্ল্যাক বিনে ময়লাগুলো আলাদা ভাবে ভরে পরিবেশটা বেশ ঝকঝকে করে ফেলেছি। পালাক্রমে চলছে ওয়াশিং মেশিন এবং ড্রায়ারে কাপড় ধোয়া এবং শুকানোর কাজ। আগের রান্না কিছুটা রয়েছে, তাই সেই ঝামেলায় আর গেলাম না। তাছাড়া তাড়া নেই। তিনদিনের উইক এন্ড। সময় পালিয়ে যাচ্ছে না। আহ… সময়টা বেশ যাচ্ছে। Continue reading “ডাবলিনের ডায়েরী – আট (২ অগাস্ট ২০০৮)”

ডাবলিনের ডায়েরী – আট (২ অগাস্ট ২০০৮)

ডাবলিনের ডায়েরী – সাত (১২ জুলাই ২০০৮)

আমি এখন চরম হোম-সিক। ইচ্ছে করছে যে দিকে দু’চোখ যায় বের হয়ে পড়ি, কিন্তু আর এক মুহুর্তও আয়ারল্যান্ডে নয়। বিষয়টা এমন নয় যে আয়ারল্যান্ড-এর উপর আমার কোন কারনে রাগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু গত আট মাস একই রুটিন মেনে চলতে চলতে আমি তিব্র বিরক্ত। খানিকটা হতাশও।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বসি কম্পিউটারের সামনে। মেইল চেক, ফেসবুকিং এবং নুতন বাতিক সা. ইনে ঘোরাঘোরির পর মাঝে মাঝে কিছু ফোন কল। তারপর শাওয়ার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়। সকালে কোন নাস্তা নেই, আফটার অল ডায়েটিং বলে কথা। দুপুরে স্ম্যাশ পটাটোর সাথে সেদ্ধ সব্জি দিয়ে লাঞ্চ। সারা দিন সিমুলেটরে C++ কোডিং, বিকেল আটটায় (যে দেশে দশটায় সূর্য ডোবে সেখানে আটটা বিকেল বৈ কি!) বাসায় ফেরত, টুকটাক কিছু দিয়ে ডিনার, তারপর মাঝে মাঝে মুভি দেখা আর এখন গল্প লেখা এবং সব শেষে ডুভেটের নিচে শান্তির ঘুম। জীবনটা বেশ কাটছে। কিন্তু সমস্যা হলো Continue reading “ডাবলিনের ডায়েরী – সাত (১২ জুলাই ২০০৮)”

ডাবলিনের ডায়েরী – সাত (১২ জুলাই ২০০৮)

ডাবলিনের ডায়েরী – ছয় (১৬ জুন ২০০৮)

আজ বেশ উত্তেজিত আমি। গত কিছুদিনের চরম দুঃচিন্তা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মিলেছে। আজ আমার থিসিসের খুব গুরুত্বপূর্ন একটা অংশ সফল ভাবে কাজ করেছে। আসলে বলা যায় আমার থিসিসের মেরুদন্ড আজ প্রথমবারের মত সোজা হয়ে দাড়িয়েছে। এখন যা বাকি, সেটা প্রধানত গায়ে মাংশ লাগানো এবং রুপচর্চা!

একটু খুলে বলি। আমাদের রিসার্চগ্রুপে অর্থাৎ ডিসস্ট্রিবিউটেড সিসটেমস্ গ্রুপ-এ ওয়ারলেস কমিউনিকেশনস নিয়ে কাজ করছি আমরা চারজন ছাত্র এবং আমাদের সুপারভাইজার ড. স্টিফান ওয়েবার। আমাদের মূল লক্ষ্য ম্যাক লেয়ার, নেটওয়ার্ক লেয়ার, ট্রান্সপোর্ট লেয়ার এবং এপ্লিকেশন লেয়ারের জন্য চারটা প্রোটকল তৈরী করা। এর মাঝে নেটওয়ার্ক এবং ট্রান্সপোর্ট লেয়ারের প্রোটকল দুটোর আরেকটি বিশেষত্ব রয়েছে। সাধারন নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে TCP/IP-এর গুরুত্ব অপরিসিম হলেও ওয়ারলেস নেটওয়ার্কে এই প্রোটকল-যূগলের দূ্র্বলতা ব্যাপক (বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যায় গেলাম না)। পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এদের বিকল্প যূগল তৈরীর জন্য গবেষনা চলছে। আমাদের প্রচেষ্টাও ঠিক সেরকমই। আমার গ্রুপমেট গগসিয়ান তৈরী করছে IP-এর বিকল্প একটি প্রোটকল এবং আমি করছি TCP-এর। সিমুলেটর হিসেবে আমরা ব্যবহার করছি অপনেট। গগসিয়ান আমার এক বছর আগে শুরু করেছে তার পি.এইচ.ডি এবং গত দেড় বছরে সে বেশ গুছিয়ে এনেছে। যদিও আমি এম.এস.সি লিডিং টু পি.এইচ.ডি-তে ঢুকেছি তবে আগেই বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে দিয়েছি স্কলারশীপ পেলে আমি এম.এস.সি করে লন্ডন চলে যাবো পি.এইচ.ডি-এর জন্য। ফলে আমার কাজটা যেখানে শেষ হবে (এম.এস.সি-এর পর), সেখান থেকে অন্য একজন এসে শুরু করবে। Continue reading “ডাবলিনের ডায়েরী – ছয় (১৬ জুন ২০০৮)”

ডাবলিনের ডায়েরী – ছয় (১৬ জুন ২০০৮)

ডাবলিনের ডায়েরী – পাঁচ (১৩ জুন ২০০৮)

প্রায় দু’মাস পর ডায়েরী লিখতে বসলাম। গত দু’মাসে লিফির জল কতটুকু বয়ে গিয়েছে জানি না, তবে কালের ঘড়ি যে আমার জীবনকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে এসেছে, সেটা বুঝতে পারছি ভালো ভাবেই। মে-এর শুরুতে আমি পঁচিশ পেরিয়ে ছাব্বিশে প রাখলাম। পেছনে তাকালে ফেলে আসা দিনগুলোকে অনেক রোম্যান্টিক মনে হয়। কান্না এবং আনন্দের সংমিশ্রনে জীবন কত নাটকই না দেখালো।

জুনের চার তারিখ ছিল বাবার মৃত্ত্বুবার্ষিকী। অবাক হয়ে যাই, দেখতে দেখতে দু’টা বছর কেটে গেল। আমার চোখে এখনও ভাসে, গতবছর যখন আমি দেশ ছেড়ে আয়ারল্যান্ড আসি, এক বছর হয়ে যাওয়ার পরও বাবার জিনিসগুলো ঠিক সেভাবেই সাজানো ছিল। কাপড়গুলো, কম্পিউটারের টেবিলটা, চশমাটা। জানি এখনও সেভাবেই আছে। আমার মা পুরো সংসারটাকে এমনভাবে গুছিয়ে রেখেছে যেন দেখলে বোঝাই যায় না এই পরিবারের প্রধান আজ আর নেই। Continue reading “ডাবলিনের ডায়েরী – পাঁচ (১৩ জুন ২০০৮)”

ডাবলিনের ডায়েরী – পাঁচ (১৩ জুন ২০০৮)

ডাবলিনের ডায়েরী – চার (২০ এপ্রিল ২০০৮)

ডাবলিন আসার পর উইক-এন্ড শব্দটার মর্মার্থ বুঝতে পেরেছি। কেন যে মানুষ তীর্থের কাকের মত উইক-এন্ডের জন্য বসে থাকে সেটা নিজেই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। সপ্তাহের রান্না, কাপড় ধোয়া, ঘর গোছানো এবং সর্বপরি দম ফেলার জন্য খানিকটা ফুরসত। সপ্তাহের পাঁচদিন চরম ব্যাস্ততার পর শুক্রবার রাত তথা প্রথম বিশ্বের ভাষায় ফ্রাইডে নাইট যেন জীবনে এক পশলা বৃষ্টি। গত একটা সপ্তাহ মানসিক এবং শারীরিক পরিশ্রম এত হয়েছে যে শুক্রবার রাতে বাসায় ফিরে মনে হলো এত শান্তির ছুটি যেন আর হয় না।

বলার মত গল্প আছে অনেক। কিন্তু গুছিয়ে আনতে পারছি না। ট্রিনিটি ল ডে দিয়ে শুরু করি। Continue reading “ডাবলিনের ডায়েরী – চার (২০ এপ্রিল ২০০৮)”

ডাবলিনের ডায়েরী – চার (২০ এপ্রিল ২০০৮)